জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার অন্যতম কারণ হিসেবে ভাবা হচ্ছে রাশিয়ার সঙ্গে পূর্ব ইউরোপের দেশ ইউক্রেনের রাজনৈতিক সংকটকে। এই উত্তেজনায় জড়িয়েছে বিশ্বের পরাশক্তিগুলো। ওই সীমান্ত এলাকায় রাশিয়া যেমন যুদ্ধাস্ত্র মোতায়েন করছে, তেমনি ইউক্রেনকে রক্ষায় এগিয়ে এসেছে ন্যাটোবাহিনী। এর উত্তাপ পড়ছে তেলের বাজারেও।

বিশ্ববাজারে এমনিতেই বাড়তির দিকে ছিল জ্বালানি তেলের দাম। তার ওপর ঢোলের বাড়ি হয়ে এলো ইউক্রেন সীমান্তে যুদ্ধের দামামা। ন্যাটো-রাশিয়ার মধ্যে তীব্র উত্তেজনার মধ্যে প্রতি ব্যারেল জ্বালানি তেলের দাম ছাড়াল ৯০ ডলার, যা ২০১৪ সালের পর সর্বোচ্চ।

নিউইয়র্ক পোস্ট লিখেছে, বুধবার আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেড়েছে ২ শতাংশ। এতে ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম ব্যারেল প্রতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯০ ডলার ৭ সেন্ট। আর ইউএস ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট ফিউচারের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৭ ডলার ৪৩ সেন্ট।

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার অন্যতম কারণ হিসেবে ভাবা হচ্ছে রাশিয়ার সঙ্গে পূর্ব ইউরোপের দেশ ইউক্রেনের রাজনৈতিক সংকটকে। এই উত্তেজনায় জড়িয়েছে বিশ্বের পরাশক্তিগুলো। ওই সীমান্ত এলাকায় রাশিয়া যেমন যুদ্ধাস্ত্র মোতায়েন করছে, তেমনি ইউক্রেনকে রক্ষায় এগিয়ে এসেছে ন্যাটোবাহিনী।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এমন অবস্থায় জ্বালানি তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসকে বড় অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারে রাশিয়া। কেননা জ্বালানির জন্য পূর্ব ও মধ্য ইউরোপের দেশগুলো মস্কোর ওপর নির্ভরশীল।

তবে রাশিয়ার বিরুদ্ধে মনোবল ধরে রাখতে ইউরোপের দেশগুলোকে আশ্বাসের বাণী শুনিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির সরকার থেকে বলা হচ্ছে, মস্কো তেল ও গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিলে এর বিকল্প ব্যবস্থা করবে ওয়াশিংটন।

কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে বাইডেন প্রশাসনের তরফ থেকে বলা হয়েছে, ইউক্রেনে আক্রমণ করলে রাশিয়ার জন্য কঠিন অবরোধ অপেক্ষা করছে। কিন্তু এসব হুমকি পাত্তা দিচ্ছে না রাশিয়া।

বরং ধীরে ধীরে ইউক্রেন সীমান্তে সেনা উপস্থিতি বাড়াচ্ছে দেশটি। এরই মধ্যে সেখানে প্রায় ১০ হাজার রুশ সৈন্য মোতায়েন করা হয়েছে। ইউক্রেনের পাশাপাশি বেলারুশের ভেতরও যুদ্ধ সরঞ্জাম পাঠাচ্ছে মস্কো। অনেকের ধারণা, যুদ্ধ শুরু হলে উত্তর দিক থেকে আক্রমণে যেতে পারে রাশিয়ান বাহিনী।

বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের অন্যতম সরবরাহকারী হওয়ায় চলমান পরিস্থিতিতে রাশিয়া ইউরোপকে জ্বালানি সংকটে ফেলতে পারে বলে জোর ধারণা। তাই হলে আসছে দিনগুলোতে আরও বেড়ে যেতে পারে তেল ও গ্যাসের দাম।

বিনিয়োগকারী ও বিশ্লেষণ প্রতিষ্ঠান গোল্ডম্যান স্যাকস গত সপ্তাহেই পূর্বাভাস দিয়ে রেখেছে, চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিতে তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। আর এই ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী বছরের প্রথম প্রান্তিক নাগাদ তা ১০৫ ডলারে উঠতে পারে।

করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন আতঙ্কে গত বছরের নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট তেলের দাম কমতে কমতে ৬৬ ডলারে নেমে গিয়েছিল। ব্রেন্ট তেলের দর কমে হয়েছিল ৬৮ ডলার।

তিন-চার দিন ওই একই জায়গায় স্থির ছিল তেলের বাজার। কিন্তু ওমিক্রন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়লেও করোনার নতুন ওই ধরনে আক্রান্ত হয়ে মানুষ খুব একটা মারা না যাওয়ায় এই ভাইরাস নিয়ে আতঙ্ক বেশ খানিকটা কেটে যায়।

এতে বিশ্বে তেলের চাহিদা বাড়বে-এ সম্ভাবনাকে সামনে রেখে আবার বাড়তে শুরু করে দাম। সেই ঊর্ধ্বগতি এখনও অব্যাহত রয়েছে। প্রতিদিনই বাড়ছে দর।

২০২০ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে শুরু করে। গত বছরের জানুয়ারি মাসে জ্বালানি তেলের দাম ছিল গড়ে প্রতি ব্যারেল ৪৯ ডলার।

এরপর থেকে গড়ে প্রতি ব্যারেল তেলের দাম ছিল ফেব্রুয়ারি মাসে ৫৩ ডলার, মার্চে ৬০, এপ্রিলে ৬৫, মে মাসে ৬৪, জুনে ৬৬, জুলাইয়ে ৭৩ এবং আগস্টে ৭৪ ডলার। অক্টোবর মাসে এই দাম ৮৫ ডলার ছাড়িয়ে যায়। ধারণা করা হচ্ছিল, শিগগিরই তা ১০০ ডলার হয়ে যেতে পারে।

বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে গত ৪ নভেম্বর থেকে বাংলাদেশ সরকারও ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে এক লাফে ১৫ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম ৮০ টাকা নির্ধারণ করে।